“যদি তুমি মরে যাও, তাহলে তুমি মরে গেছো!” কিছুই অবশিষ্ট থাকে না—না কোনো স্মৃতি, না কোনো উত্তরাধিকার, না কোনো অনুশোচনা। আমাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেন আমরা শুধু ব্যক্তিপূজা করি, কয়েকটি নামকে মহিমান্বিত করি, অথচ যে সামগ্রিক ত্যাগ আমাদের আজকের অবস্থানে এনেছে, তা ভুলে যাই। মুক্তিযুদ্ধ কোনো একক ব্যক্তির জন্য ছিল না। এটি ছিল আমাদের পরিচয়, আমাদের স্বাধীনতা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য লড়াই।
কিন্তু আজ, এত বছর পর, আমরা কি সত্যিই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? নাকি শুধু এক ধরনের শোষণের বদলে আরেক ধরনের শোষণের শিকার হচ্ছি?
ব্রিজ আর মেট্রো কি যথেষ্ট?
সরকার বড় বড় অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখিয়ে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরে—মেট্রোরেল, ব্রিজ, হাইওয়ে। কিন্তু এগুলো কতটা কার্যকর, যখন ন্যায়বিচার শুধুই এক শ্রেণির জন্য বরাদ্দ থাকে? যখন দুর্নীতি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শেকড় গেড়ে বসেছে? যখন সাধারণ মানুষকে প্রতিটি পদক্ষেপে ক্ষমতালোভী কর্মকর্তাদের সামনে মাথা নত করতে হয়?
দেশ কি উন্নতি করেছে, যদি এখনো সরকারি অফিসে মানুষ হয়রানির শিকার হয়? যদি ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ না হয়? যদি ন্যূনতম অধিকারগুলোও বিলাসিতার মতো মনে হয়?
এটি কি প্রকৃত উন্নয়ন, যদি হাসপাতাল, থানা, আদালত—প্রতিটি জায়গায় সাধারণ মানুষকে এখনো ন্যায্য সেবা পাওয়ার জন্য লড়াই করতে হয়? উত্তরটা দুঃখজনকভাবে পরিষ্কার: না। উন্নয়ন শুধু দালানকোঠা নয়; এটি মানুষের সম্মান, সমতা, এবং ন্যায়ের নিশ্চয়তার উপর নির্ভর করে।
নিজের দেশেই যেন চোর
এই দেশে সরকারি অফিসে ঢুকলেই নিজেকে চোর মনে হয়। কেন? কারণ এখানে সততা একটি অভিশাপ। তুমি যদি ঘুষ দিতে না চাও, যদি নিজের অধিকার দাবি করো, তবে তোমাকে এমনভাবে দেখা হবে যেন তুমি কিছু চুরি করতে এসেছো—যেন তুমি এমন কিছু দাবি করছো যা তোমার পাওয়ার কথা নয়।
তুমি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকো, আর পাশ দিয়ে ক্ষমতাশালী ও পরিচিতজনেরা কয়েক মিনিটেই তাদের কাজ সেরে চলে যায়। তখন উপলব্ধি হয়, ন্যায়বিচার, সুবিচার আর শৃঙ্খলা—এসব আসলে কেবলই এক মরীচিকা।
যখন একটি দেশ তার নাগরিকদের নিজেদের ন্যায্য অধিকার চাইতে গেলেও অপরাধী মনে করায়, তখন বুঝতে হবে যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এটি বোঝায় যে আমাদের সিস্টেম শুধু নষ্ট নয়, এটি মূলত শোষণের জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা
হে আল্লাহ, এই দেশকে রক্ষা করো তাদের হাত থেকে যারা প্রকৃত উন্নয়নকে ভয় পায়, যারা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। আমাদের রক্ষা করো তাদের হাত থেকে যারা সাধারণ মানুষকে শোষণের উপকরণ ছাড়া কিছুই ভাবে না।
আর যদি কোনো দিন আমিও এই দুর্নীতিগ্রস্ত, অবিচারপূর্ণ চক্রের অংশ হয়ে যাই, তবে আমাকেও ক্ষমা করো।
এটি শুধু আমার একার হতাশা নয়। এটি সেই কোটি কোটি মানুষের নীরব আর্তনাদ, যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যারা বারবার প্রতারিত হচ্ছে। যাদের বোঝানো হচ্ছে যে কয়েকটি উড়ালসেতু আর চকচকে প্রকল্প মানেই আমরা বিজয়ী।
কিন্তু প্রকৃত বিজয় আসবে তখনই, যখন ন্যায়বিচার পেতে টাকা লাগবে না। যখন সরকারি অফিসে ঢুকে মানুষ ভয় পাবে না। যখন সম্মান কোনো বিশেষ শ্রেণির জন্য বরাদ্দ থাকবে না, বরং তা হবে সবার অধিকার।
সেই দিন পর্যন্ত, এই উন্নয়ন কেবলই এক মায়া—একটি ভ্রান্তি।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
Leave a Reply